নামাজের ফরজ কয়টি এবং কি কি?

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের উপর আবশ্যক ফরজ একটি ইবাদত। তবে আপনি যদি নামাজ যথাযথভাবে পালন করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নামাজের ফরজ কয়টি এবং কি কি সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে নামাজের ফরজ কয়টি এবং নামাজের ফরজ গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

নামাজের ফরজ কয়টি জানার কারন কি?

ফরজ মানে হল আবশ্যক পালনের বিষয়। অর্থাৎ আপনি অন্য কিছু মানেন কিংবা না মানেন আপনার জন্য ফরয ইবাদত গুলো অবশ্যই পালনীয় বিষয় হিসাবে বিবেচিত হবে।

অন্যথায় আপনি মুসলমান হিসেবে গণ্য হবেন না। ঠিক একই রকমভাবে আপনি যদি ফরজ নামাজ আদায় করেন তাহলেই নামাজের মধ্যে যে বিষয়গুলো অবশ্যপালনীয় রয়েছে, সেগুলো জানতে হবে।

অর্থাৎ নামাজের মধ্যে ফরজ যে বিষয়গুলো রয়েছে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি কি অবগত না হন এখন তাহলে, আপনার নামাজ সঠিক হবেনা। আপনার নামাজ আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।

সেজন্য আপনি যদি চান আপনার ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হোক, এজন্য আপনাকে অবশ্যই নামাজের ফরজ বিষয়গুলা সেগুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে এবং সেগুলো পালন করে নামাজ আদায় করতে হবে।

নামাজের ফরজ কয়টি?

নামাজের অত্যাবশ্যকীয় ফরজ ইবাদত হল ১৩ টি। অর্থাৎ নামাজের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ফরজ ১৩টি নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হবে এবং এই নিয়মের মধ্যে আপনাকে নামাজ আদায় করতে হবে।

নামাজের ফরজ কি কি?

এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক কি সেই অত্যাবশ্যকীয় বিষয় গুলো, যেগুলো আপনাকে পালন করতেই হবে নামাজ সহি শুদ্ধ করার জন্য।

শরীর পবিত্র হওয়া। [সুরা মায়িদা, আয়াত ৬; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাদিসটি হাসান)] ২. কাপড় পবিত্র হওয়া। [সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাসান)]

৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাসান)]

৪. সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত)। [সুরা আরাফ, আয়াত ৩১; সুরা নূর, আয়াত ৩১; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬ (হাসান), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৭৫৬ (হাসান), তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩, ৩৭৭ (সহিহ), আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস : ৬৪১ (সহিহ), ২/৫৬৭, হাদিস : ৪১০৪ (গ্রহণযোগ্য), মারাসিলে আবি দাউদ ৮৬, হাদিস : ২৮ (গ্রহণযোগ্য)]

৫. কিবলামুখী হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১]

৬. ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। [সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩; বুখারি ১/৭৫, হাদিস : ৫২১]

৭. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। [বুখারি ১/২, হাদিস : ১]

নামাজের ভেতরে ছয়টি ফরজ

১. তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা।

[সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮]

২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ (হাদিসটি সহিহ)]

৩. কিরাত পড়া (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ)। [সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩ (হাদিসটি সহিহ)]

৪. রুকু করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২]

৫. দুই সিজদা করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১]

৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা) [আবু দাউদ : ১/১৩৯, হাদিস : ৯৭০ (সহিহ)]

বি.দ্র. : নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন—সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫১৩]

আর উপরে যে ফরজ ইবাদতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো নামাজের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় কিছু ফরজ কাজ এগুলো আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে।

আপনি যদি ফরজ ইবাদত বন্দেগী কোনভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেন, তাহলে আপনার নামায বাতিল হিসেবে গণ্য হবে অর্থাৎ আপনাকে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে।

ভুলবশত ফরজ বাদ পড়ে গেলে কি করব?

ভুলবশত যদি ফরজ গুলো কোন কারণে ছুটে যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে কি করতে হবে অর্থাৎ কি করলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে?

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা কিনা এটা সম্পর্কে ভাবেন যে নামাজের মধ্যে ফরজ ইবাদত কোন একটি বাতিল হয়ে গেলে সাহু সিজদা করলে নামায পুনরায় সঠিক হয়ে যাবে।

আপনার ধারণা যদি এরকম থেকে থাকে তাহলে আপনার ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। আপনার জন্য নিচের হাদিসটি।

নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫০৫) ফাতাওয়া শামি, ১ : ৪৪৭, হিদায়া, ১ : ৯৮]

অর্থাৎ নামাজের ফরজ যদি কোনো কারণে ছুটে যায় তাহলে আপনাকে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। অন্যথায় আপনার নামায বাতিল হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনি পাপের ভাগীদার হবে।

নামাজের ফরজ কয়টি এবং কি কি সে সম্পর্কে উপর আলোচনা করা হলো।