নামাজ সঠিক হওয়ার জন্য যেমন কিছু নিয়ম রয়েছে। তেমনি নামাজ এমন কিছু কাজ আছে যা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি?
আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন নামাজ ভঙ্গের কারণ কি কি?
যে সকল কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় বা নামাজ নষ্ট হয় তাকে বলে “মোফছেদাতে নামাজ”।
নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি
আমরা মুসলিম আর একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের প্রতিটি মুসলিম মানুষের উচিৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। কারণ মৃত্যুর পরে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নিবেন।
আমরা মুসলিম ঠিকই, নামাজও আদায় করি ঠিকই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে এখনও পারেন না। কিনবা নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ জানেন না।
আজ এই পোস্টটি ওই সকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য। তাই দেরি না করে এখনই পোস্টটি পড়ে নিন। জেনে নিন আপনাদের অনেক না জানা তথ্য।
নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১. নামাজ অশুদ্ধ ভাবে পড়া।
যেমনঃ নামাজের ভেতর কিরাতে যদি আপনার এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে, আবার নতুন করে আদায় করতে হবে।
২. নামাজের ভেতর কথা বলা।
যেমনঃ নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক কথা বললে, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। নতুন করে আবার আদায় করতে হবে।
৩. কোনো লোককে সালাম দেওয়া।
যেমনঃ নামাজ আদায় অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪. সালামের উত্তর দেওয়া।
যেমনঃ সালাম অর্থ শান্তি। প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ একজন আরেক জনের সাথে দেখা হলে প্রথমে সালাম দেওয়া। কিন্তু নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৫. উহ্-আহ্ শব্দ করা।
যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই নামাজরত অবস্থায় উহ্-আহ্ শব্দ করা যাবে না।
৬. বিনা ওজরে কাশি দেওয়া।
যেমনঃ নামাজ হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত। প্রতিটি মুসলমানদের উচিৎ মন দিয়ে ভালো ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। যদি কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে অপ্রয়োজনে কাশি দেয়। তাহলে অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৭. আমলে কাসির করা।
যেমনঃ কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। তাদের তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৮. বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা।
যেমনঃ কোনো বিপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৯. তিন তাসবিহ পরিমাণ শরীর খুলিয়া থাকা।
যেমনঃ নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ হবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তির গেঞ্জি, শার্ট ও প্যান্ট নাভির নিচ থেকে রুকু সিজদার সময় সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় এভাবে অতিবাহিত হয়, তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
নারীদের মাথা ও সতর ডাকা। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।
১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা লওয়া।
যেমনঃ ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া।
যেমনঃ সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়ার কথার সাথে নামাজরত অবস্থায় শামিল হলে, এর দ্বারা নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১২. নাপাক জায়গায় সেজদা করা।
যেমনঃ নামাজের জায়গা পবিত্র না হলে নামাজ হবে না। নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। নামাজ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদত। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে, সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া, যা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই অপবিত্র জায়গায় সেজদা করলে নামাজ হবে না নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৩. নামাজের মধ্যে কিবলার সিনা ঘুরে যাওয়া।
যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোনো কারণে সিনা কিবলা থেকে ঘুরে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে যানবাহনের ক্ষেত্রে আলাদা।
১৪. নামাজে শব্দ করে হাসলে।
যেমনঃ নামাজে শব্দ করে হাসলে ওজু ভেঙে যায়। আর ওজু ভেঙে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৫. নামাজে কোরআন দেখে পড়লে।
যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কোরআন দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৬. নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করলে।
যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় সাংসারিক কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।
১৭.হাসির জবাব দেওয়া।
যেমনঃ নামাজরত অবস্থায় কারো হাসির উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। যদি কেউ নামাজরত অবস্থায় হাসির উত্তর দেয় এর দ্বারা তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৮. নামাজে খাওয়া বা পান করা।
যেমনঃ যদি কেউ কিছু খায় বা পান করে তা যদি দাতে আটকে থাকা খাদ্য জিহবা দিয়ে বের করে খেয়ে ফেলে। উক্ত খাদ্য চানাবুটের চেয়ে ছোট হয় তাহলেও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো।
যেমনঃ মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না।
নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি
আমরা সকলেই জানি এক মাত্র নামাজের মাধ্যমে দুনিয়ায় ও আখেরাতে কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই আমাদের সকলের উচিৎ জেনে বুঝে ভালো ভাবে নামাজ আদায় করা।
আজ এই পোস্টটি পাড়ার পরে আশা করি আর কোনো সমস্যা থাকবে না আপনাদের নামাজ ভঙ্গের ১৯ টি কারণ নিয়ে।